তামাবিল বন্দরে চাঁদাবাজির অভিযোগ, সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা

- আপডেট সময় : ০৮:৩৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫ ০ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের সীমান্তবর্তী তামাবিল স্থলবন্দরে প্রতিদিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। দেশের আমদানি-রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরকে ঘিরে সম্প্রতি চাঁদাবাজি ও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। ট্রাকপ্রতি ৪৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে কথিত “অফিস খরচ”—যা আদতে একটি চক্রের পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
সূত্র জানায়, বন্দরে প্রবেশকারী প্রতিটি ট্রাক থেকে সিএনএফ এজেন্টদের সহায়তায় ৪৫০ টাকা করে আদায় করছে তামাবিল আমদানিকারক গ্রুপের একটি চক্র। এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন ওমর ফারুক, যিনি আব্দুল করিম রাশেল এবং চারজন সহযোগীর মাধ্যমে এ চাঁদা সংগ্রহ করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বন্দরের ভিতরে পাথর আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পরিমাপ অনুযায়ী পণ্য খালাস শুরু করার পর থেকেই কিছু অসাধু চক্র ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত বিলম্ব, হয়রানি ও নানা অজুহাত তুলে জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দিনের বেলায় কিছু গাড়ির ওজন লোক দেখানোর জন্য করা হলেও, প্রকৃত হিসাব-নিকাশ হয় ‘কনটাক’ অনুযায়ী। অর্থাৎ, দিন শেষে ফাইনাল বিল তৈরি হয় আগেই ঠিক করে রাখা চুক্তির ভিত্তিতে—ওজন কেবল রীতিনীতি রক্ষা করার জন্যই দেখানো হয়। তাদের ভাষায়, “যেই লাউ সেই কদু”—সবই লোক দেখানো নাটক।
এই চাঁদাবাজির বাস্তবতা জানতে গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে তামাবিল বন্দরে যান স্থানীয় তিন সংবাদকর্মী—দৈনিক আজকের পত্রিকার মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, ভোরের কাগজের সাইফুল ইসলাম বাবু এবং দৈনিক ইত্তেফাকের নাজমুল ইসলাম। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর ফেরার পথে আব্দুল করিম রাশেলের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। তারা গালিগালাজ ও অপমানজনক আচরণ করেন, এমনকি ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
রাশেল হুমকির সুরে বলেন, “আমার অনুমতি ছাড়া কোনো সাংবাদিক বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না।” সাংবাদিকদের প্রশ্ন, তাহলে কি তামাবিল বন্দর এখন ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে?
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি মহরম আলী জানান, “সমিতির অফিস খরচের জন্য গাড়িপ্রতি ৪৫০ টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।” টাকা কীভাবে ব্যয় হচ্ছে—এ প্রশ্নে তিনি সাক্ষাতে ব্যাখ্যার কথা বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা বললেও, বাস্তবে তারাই আমাদের চুষে খাচ্ছে। চাঁদা দিয়েও রেহাই নেই।”
এ বিষয়ে জানতে কাস্টমস কর্মকর্তা ইয়াকুব জাহিদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, “আমরা কেবল বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পরিমাপ অনুযায়ী কারগো গ্রহণ করে ক্লিয়ারেন্স দেই। এর বাইরে কাস্টমসের কেউ চাঁদা আদায়ে জড়িত নয়।”
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “প্রতিটি গাড়ি পরিমাপের ভিত্তিতে বন্দরে প্রবেশ ও বাহির হয়। ট্রাকপ্রতি অর্থ আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, এবং আমাদের কোনো কর্মকর্তা এতে সম্পৃক্ত নয়।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল ও সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, এই অব্যবস্থা ও দুর্নীতির স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি, সংবাদকর্মীদের হয়রানির ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে সর্বমহলে।