ঢাকা ০৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন ::
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন এর জন্য যোগাযোগ করুনঃ ০১৫৭২-৬৩১৭৪৫
বিজ্ঞপ্তিঃ ::
আমাদের পত্রিকাতে সারাদেশে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠিয়ে দিন ই-মেইলেঃ sylhetertimes24@gmail.com

সিলেট প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ‘ধর্ষণ’, মৃত সন্তান প্রসব, মামলা করে বিপাকে

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৭:০৫:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১ ১৬৬ বার পড়া হয়েছে

সিলেট প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ‘ধর্ষণ’, মৃত সন্তান প্রসব, মামলা করে বিপাকে

সিলেটের টাইমস এর সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মেয়েটির বয়স যখন তিন তখন মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে আবার বিয়ে করেন মা। মায়ের সাথে তার নতুন সংসারে যায় মেয়েটিও। বাবা-মা দুজনেই দিমজুরের কাজ করে চালাতেন সংসার।

১৫ বছর বয়সে একই গ্রামের আবুল হোসেন খানের প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। দুজনের সম্পর্কের এক একটি মৃত সন্তান জন্ম দেয় মেয়েটি। এরপর আবুল হোসেন অস্বীকার করেেন এই সম্পর্ক।

এরপর ওই মেয়ে পরিবার সমাজপতি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার না পেয়ে দারস্ত হন আদালতের। আর এতেই বিপাকে পরেছে তার পুরো পরিবার।

ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব তিমিরপুর গ্রামে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই কিশোরী মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। পরে তার ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়। আদালতের নির্দেশে তার মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই।

মামলা বিবরণে জানা যায়, ওই কিশোরীর দিনমজুর বাবার কোন বাড়ি নেই। শাখা বরাক নদীর তীরে সরকারি জায়গায় একটি ছাপটা ঘর বানিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছেন। দুই বছর আগে একই এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে আবুল হোসেন খানের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ওই কিশোরীর।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর ওই কিশোরীর মা-বাবা সিলেট যাওয়ার সুবাধে তাদের বাড়িতে যান আবুল হোসেন। এ সময় ওই কিশোরীর সাথে জোরপূর্বক শারিরীক সম্পর্ক করেন। এ সময় তাকে স্ত্রী মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আবুল। লজ্জায় ও ভয়ে ওই কিশোরী বিষয়টি কাউকে জানায়নি।

এক পর্যায়ে সে অন্তঃসত্বা হয় পরলে আবুল হোসেনকে আবারও বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আবুল বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। কিশোরীর বাবা অভিযুক্ত যুবকের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার চাইলেও কেউ পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়নি।

অবশেষে গত ৭ জুন ভুক্তভোগী কিশোরীর দিনমজুর বাবা বাদি হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (৩)-এ অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।

ওই কিশোরীর বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও আমি শারীরিক সম্পর্কে রাজি ছিলাম না। আমার মা-বাবা বাড়িতে না থাকার সুবাধে আমাকে জিম্মি করে আবুল হোসেন ধর্ষণ করে। আমি গর্ভবতী হয়ে গেলেও সে আমাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি। আমি এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। আমি স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি চাই।’

কিশোরীর বাবা বলেন, আবুল হোসেন ও তার পরিবার এলাকায় খুবই প্রভাবশালী। মেয়েকে ধর্ষণের পরও সে ক্ষন্ত হয়নি। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। কখনো রাস্তাঘাটে হুমকি দেয়, আবার কখনো বাড়িতে এসে হুমকি দেয়।’

মেয়ের ধষণের বিচার চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অসহায় মানুষ এখন এই মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো। দিন আনি দিন খাই। আবুল ও তার পরিবারের ভয়ে রাস্তায় বের হতে পারি না। আদালতের কাছে একটাই আমি যেন আমার মেয়ের উপযোক্ত বিচার পাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবক আবুল হোসেন খান ও তার বাবা আবুল কালাম খানের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই কিশোরী মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়ার পর ওইদিন রাতেই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে জানান কিশোরীর পরিবার। কিন্তু তারা কারও সাড়া পাননি। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিষয়টি জানালে পরদিন শুক্রবার তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৯নং ওয়ার্ড) ফজল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু মেয়েটির পরিবার আদালতে মামলা করেছে। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে আর কোন চিন্তা করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এরপরও আমরা চেষ্টা করব বিষয়টি যেন স্থানীয়ভাবে সমাধান করা যায়। আমরা উভয় পরিবারকে নিয়ে বসার চেষ্টা করছি।’

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আহাদ বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলাকালে ওই কিশোরী একটি মৃত সন্তান প্রসব করেছে। মামলার তদন্তের জন্য আমরা নবজাতকের ডিএনএ সংগ্রহ করেছি।

সূত্র :: sylhettoday24

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সিলেট প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ‘ধর্ষণ’, মৃত সন্তান প্রসব, মামলা করে বিপাকে

আপডেট সময় : ০৭:০৫:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১

মেয়েটির বয়স যখন তিন তখন মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে আবার বিয়ে করেন মা। মায়ের সাথে তার নতুন সংসারে যায় মেয়েটিও। বাবা-মা দুজনেই দিমজুরের কাজ করে চালাতেন সংসার।

১৫ বছর বয়সে একই গ্রামের আবুল হোসেন খানের প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। দুজনের সম্পর্কের এক একটি মৃত সন্তান জন্ম দেয় মেয়েটি। এরপর আবুল হোসেন অস্বীকার করেেন এই সম্পর্ক।

এরপর ওই মেয়ে পরিবার সমাজপতি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার না পেয়ে দারস্ত হন আদালতের। আর এতেই বিপাকে পরেছে তার পুরো পরিবার।

ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব তিমিরপুর গ্রামে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই কিশোরী মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। পরে তার ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়। আদালতের নির্দেশে তার মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই।

মামলা বিবরণে জানা যায়, ওই কিশোরীর দিনমজুর বাবার কোন বাড়ি নেই। শাখা বরাক নদীর তীরে সরকারি জায়গায় একটি ছাপটা ঘর বানিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছেন। দুই বছর আগে একই এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে আবুল হোসেন খানের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ওই কিশোরীর।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর ওই কিশোরীর মা-বাবা সিলেট যাওয়ার সুবাধে তাদের বাড়িতে যান আবুল হোসেন। এ সময় ওই কিশোরীর সাথে জোরপূর্বক শারিরীক সম্পর্ক করেন। এ সময় তাকে স্ত্রী মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আবুল। লজ্জায় ও ভয়ে ওই কিশোরী বিষয়টি কাউকে জানায়নি।

এক পর্যায়ে সে অন্তঃসত্বা হয় পরলে আবুল হোসেনকে আবারও বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আবুল বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। কিশোরীর বাবা অভিযুক্ত যুবকের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার চাইলেও কেউ পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়নি।

অবশেষে গত ৭ জুন ভুক্তভোগী কিশোরীর দিনমজুর বাবা বাদি হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (৩)-এ অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।

ওই কিশোরীর বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও আমি শারীরিক সম্পর্কে রাজি ছিলাম না। আমার মা-বাবা বাড়িতে না থাকার সুবাধে আমাকে জিম্মি করে আবুল হোসেন ধর্ষণ করে। আমি গর্ভবতী হয়ে গেলেও সে আমাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি। আমি এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। আমি স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি চাই।’

কিশোরীর বাবা বলেন, আবুল হোসেন ও তার পরিবার এলাকায় খুবই প্রভাবশালী। মেয়েকে ধর্ষণের পরও সে ক্ষন্ত হয়নি। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। কখনো রাস্তাঘাটে হুমকি দেয়, আবার কখনো বাড়িতে এসে হুমকি দেয়।’

মেয়ের ধষণের বিচার চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অসহায় মানুষ এখন এই মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো। দিন আনি দিন খাই। আবুল ও তার পরিবারের ভয়ে রাস্তায় বের হতে পারি না। আদালতের কাছে একটাই আমি যেন আমার মেয়ের উপযোক্ত বিচার পাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবক আবুল হোসেন খান ও তার বাবা আবুল কালাম খানের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই কিশোরী মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়ার পর ওইদিন রাতেই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে জানান কিশোরীর পরিবার। কিন্তু তারা কারও সাড়া পাননি। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিষয়টি জানালে পরদিন শুক্রবার তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৯নং ওয়ার্ড) ফজল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু মেয়েটির পরিবার আদালতে মামলা করেছে। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে আর কোন চিন্তা করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এরপরও আমরা চেষ্টা করব বিষয়টি যেন স্থানীয়ভাবে সমাধান করা যায়। আমরা উভয় পরিবারকে নিয়ে বসার চেষ্টা করছি।’

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আহাদ বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলাকালে ওই কিশোরী একটি মৃত সন্তান প্রসব করেছে। মামলার তদন্তের জন্য আমরা নবজাতকের ডিএনএ সংগ্রহ করেছি।

সূত্র :: sylhettoday24