শিরোনাম
দি সিলেট ইসলামিক সোসাইটিরপঞ্চম শ্রেণি মেধাবৃত্তি প্রদান সম্পন্ন নর্থইস্ট নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদেরআন্দোলন, কলেজ বন্ধ ঘোষণা জগন্নাথপুরে আফজল হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন জগন্নাথপুর থানার এসআই সাব্বির হাসান সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন নিজ দায়িত্ব জুলুমের শাস্তি দুনিয়াতে দিয়ে দেওয়া হয় – হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনারকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ড্যাব সিলেট আমিরাত প্রবাসীদের জন্য সুখবর, ভিসা নবায়নের সুযোগ বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার আরশ আলীর সুস্থতার জন্য গণতন্ত্রী পার্টি সিলেট দোয়া কামনা হামলার শিকার হলেন আবুল হোসেন শরীফ সিলেট নগরীতে দুর্ধর্ষ চুরি
রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

বিশ্বকাপে মহাউন্মাদনা ও উত্তম জাতির অধ:পতন

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
প্রকাশের সময় : রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

বিশ্বকাপ ফুটবলের জোয়ারে ভাসছে দেশ, কাঁপছে বিশ্ব। মিডিয়ার চোখ ধাঁধানো কভারেজ দেখে ছেলে-বুড়ো সবার মনেই বিশ্বকাপ ফুটবল যেন এক মহাউন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি জাতীয় পত্রিকায় একটি আলোচিত সংবাদ ছিল আর্জেন্টিনার পতাকা টানাতে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে। তার মানে বাংলাদেশে ভিন দেশের পতাকা টানাতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে। কার জন্য? কাদের জন্য এ জীবন উৎসর্গ?

খ্যাতনামা এক সাংবাদিক আফসোস করে বলেন, যে আর্জেন্টিনার আমরা ভক্ত। অথচ সেই আর্জেন্টিনার দলের খেলোয়াড়রা বাংলাদেশ কোথায়, তা জানেন না। অথচ তাদের জন্য এ দেশটির অগণিত ভক্ত নফল নামাজ পড়েন। ঝগড়া করেন বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। রাজপথে আহাজারি করেন হাজারো ভক্ত। আর্জেন্টিনার পতাকা ঘরে ঘরে টানিয়ে উল্লাস করেন।’ এতে প্রমাণ হয়, আমরা বাঙালিরা কতটা আবেগী। যে দেশে খেলোয়াড় আমাদেরকে চেনেই না, আমরা তাদের জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিচ্ছি।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভিনদেশি পতাকা টানানো নিয়ে মিডিয়ায় অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হর্তাকর্তাদের ঘুম ভাঙছে না। সারাদেশের অলিতে-গলিতে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা টানানো হয়েছে। আসলে কোনো সুনাগরিকের কাছে কি ভিনদেশি পতাকার জন্য জীবনদান কাম্য? স্বাধীন দেশে বিদেশি পতাকার এমন সয়লাবই বা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। নিজের দেশ যখন বিশ্বকাপে খেলল, তখন তো কেউ পতাকা টানায়নি?

তাছাড়া সারা দেশে লাখ লাখ গজ পতাকার কাপড় বিক্রি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং হচ্ছে বিদেশি পতাকা কেনায়। এটা কি এমন দেশের জন্য কাম্য হতে পারে যে দেশে বস্ত্রের অভাবী মানুষের অভাব নেই? তাছাড়া কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের জীবন-যৌবন, সম্পদ ও সময়ের হিসাব নেবেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৬)। তেমনি মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া কাউকে এক কদম সামনে অগ্রসর হতে দেয়া হবে নাথ … জিজ্ঞেস করা হবে তার যৌবন সম্পর্কে কোন কাজে তা ব্যয় করেছে।’ (তিরমিজি)।

প্রকৃত মু’মিন প্রতি মুহূর্তেই সচেতন থাকে, কিভাবে বেশি বেশি করে আখেরাতের সম্বল অর্জন করা যায়। কারণ, যে কোন সময়ই হঠাৎ করে হায়াতখানা শেষ হয়ে যেতে পারে। আর তখনই চলে যেতে হবে পরপারে। যেথায় আমল করে নেকীর পাল্লা ভারী করার থাকবে না আর কোন সুযোগ। কাজেই কোন সচেতন মানুষ হেলায় খেলায় মূল্যবান সময় নষ্ট করার চিন্তাই করতে পারেনা। তবুও দুনিয়ার বাস্তবতা আমাদেরকে এমনভাবে ঘেরাও করে রাখে যে, আখেরাতের জন্য পুুঁজি সংগ্রহের কথা আমরা বেমালুম ভুলেই যাই। এমনকি শুধু দুনিয়ায় আয় উন্নতি বৃদ্ধি নয়, কোন কোন সময় আমরা আমোদ ফূর্তিতে বিভোর হয়ে কতো সময় যে বেহুদা নষ্ট করি তার কোন শেষ নেই। মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে অন্য বাজে কিছুতে ব্যস্ত রাখার জন্য শয়তানের যেসব সরঞ্জামাদি রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে খেলাধুলা।

শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে কিছু খেলাধুলা বা ক্রীড়াচর্চা ইসলামে অবশ্যই হারাম নয়। কিন্তু খেলাধুলার হার জিতের এ সামান্য বিষয়টা বিশ্বে আজ যে অসামান্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে, তা ভাবতেও অবাক লাগে! নিজের পছন্দের দলটির বিজয় উদযাপনে এক শ্রেণীর লোক বল্গাহারা আনন্দ ফুর্তিতে আত্মহারা হওয়া শুরু করে দেয়। এক নাগাড়ে হর্ণ বাজিয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালনা করে, কানফাটা আওয়াজে পটকা বিষ্ফোরণ করে, জনমানুষের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে উল্লাসে ফেটে পড়ে। আর যদি প্রিয় দলটি পরাজিত হয়ে যায়, তাহলে শোকে দুঃখে এবং প্রতিহিংসার নেশায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপক্ষ দলের প্রতি। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দেরকে হাতের নাগালে না পেলে তাদের সমর্থকদের প্রতি। সমর্থকদের না পাওয়া গেলে প্রতিসিংসা মেটাতে হবে হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, গাড়ি-ঘোড়া, দোকানপাট ভাংচুর করে জঙ্গলের হিংস্র প্রাণীর চেয়েও মারাত্মক অগ্নিরূপ ধারণ করে ত্রাস সৃষ্টি করে।

মানব জাতির জন্য আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত দ্বীন ইসলাম থেকে বঞ্চিত অন্যান্য জাতির লোকদের ক্ষেত্রে এমন হয়ে গেলে আশ্চর্যের কোন বিষয় ছিল না। কারণ অমুসলিমদের কাছে পরকালের যিন্দেগীর হিসেব নিকেশের কোন ভয় নেই। দুনিয়ার আনন্দ ফুর্তি নগদ যা পাওয়া যায়, তা-ই তো লাভ। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, “তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) বলে, আমাদের এ দুনিয়ার জীবনটাই একমাত্র জীবন, এরপর আমাদেরকে পুনরায় জীবন দেয়া হবে না।’’ (আনআ’ম : ২৯), আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, “যারা কাফের হয়ে গেছে, তারা তো ভোগ বিলাস আর খাওয়া-দাওয়া নিয়েই ব্যস্ত, যেমনটি জন্তু-জানোয়ার করে থাকে। আর জাহান্নাম হচ্ছে তাদের ঠিকানা।’’ -(মুহাম্মদ : ১২)

যারা কুফরীর রাস্তায় চলে গেছে এবং আখেরাতের জিন্দেগীর ধারণা যাদের কাছে নেই, তাদের জন্য খেলাধুলা আর আমোদ-ফূর্তি অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া অস্বাভাবিক মোটেই নয়। কিন্তু আপশোস হচ্ছে, মুসলিম নামধারী অগণিত জনতা আজ ঠিক কাফেরদের মতই খেলাধুলার পেছনে দেওয়ানা হয়ে ছুটছে। গরীব দেশ সমূহেরও যেখানে অনেক মানুষ জীবন যাপনের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, সেখানেও রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল অর্থ খেলাধুলার পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে নির্দ্বিধায়। বিশ্বকাপ, অলিম্পিক এসব খেলাধুলা দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা নষ্ট করে টিভি’র পর্দার সামনে বসে থাকেন অনেকেই। নামাযী লোকেরা জামাত ছাড়তেও দ্বিধা করছে না। এমনকি নামাযের ওয়াক্তও চলে যায় কোন কোন সময়! নামায পড়তে আসলে যে খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। আবার চট্ করে যদি একটা গোল হয়ে যায়, নামায পড়ার ফাঁক দিয়ে।

আপনারা অনেকেই পত্রিকা মারফত হয়তো খবর পেয়েছেন, বাংলাদেশের এক যুবক বা কিশোর বাড়ির ছাদে বিশ্বকাপের প্রিয় দলের পতাকা উড্ডীন করতে গিয়ে নিজের জীবন খেলাই সাঙ্গ করে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র এবং দেশের আরও অনেক যুবক প্রিয় দল ব্রাজিলের খেলোয়াড়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাথার চুল ন্যাড়া করে প্রিয় দলের প্রতি ভক্তি ও ভালবাসার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে আসছে। পত্রিকায় আরও রিপোর্ট এসেছে বাংলাদেশের একটি মাত্র জিলায় বিশ্বকাপ উপলক্ষে দু’কোটি টাকারও বেশি ব্যাটারী বিক্রি হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও যেন টিভি থেকে খেলা দেখার নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। এমনকি জাতীয় সংসদের অধিবেশন পর্যন্ত এমনভাবে ঠিক করা হয়েছে, যাতে সংসদ সদস্যদের খেলা দেখা ব্যাহত না হয়। বেশ কয়েক বৎসর পূর্বে কোন একটি আরব দেশ বিশ্বকাপের ফুটবল খেলায় স্পেনকে হারিয়ে দিল। সে আরব দেশটির এক পত্রিকায় বড় কলামে হেড লাইনে খবর এলো, “এতদিন পর স্পেনে মুসলিম মুসলিম হত্যাযজ্ঞের একটা প্রতিশোধ নেয়া গেল।’’ হায়রে! উত্তম জাতির অধ:পতন আর কাকে বলে। বেশি দিন হয়তো আর বাকি নেই, মুসলিম ফুটবল প্রেমিকদের অনেকেই অমুসলিম ফুটবল প্রেমিকদের মতই শ্লোগান দিয়ে বসবে, “ফুটবল ইয আওয়ার রিলিজিওন।’’ ফুটবলই আমাদের ধর্ম। এমন গোমরাহী থেকে মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর মা’ফ করুন।

আরও আশ্চর্য হতে হয়, কোন কোন সময় সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান বা যে কোন মুসলিম দেশ আন্তর্জাতিক কোন টুর্নামেন্টে শক্তিশালী কোন মুসলিম দেশকে হারিয়ে দিলে অনেক ইসলামিষ্ট বড্ড খুশিতে টগবগ হয়ে যায়। মনে হয় যেন ইসলামের বিজয় সংঘটিত হয়ে গেছে। ভাবেন, এসব কীর্তি ইসলাম ও মুসলমানদের সুনাম সুখ্যাতি বয়ে নিয়ে আসে দুনিয়াবাসীর কাছে! প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবী ওমর (রা:) বলেছিলেন, আমরা পৃথিবীতে ছিলাম একটা অখ্যাত জাতি হিসেবে। ইসলামের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছেন। যেদিন থেকে আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে মর্যাদা অন্বেষণ করতে থাকবো, তখন থেকেই আল্লাহ আমাদেরকে হেয়, তুচ্ছ করে দেবেন।

হে মুসলিম সমাজ! তাকিয়ে দেখুন ফিলিস্তিনে, ভারতে, কাশ্মীরে মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। মুসলিম জাতির এ দুর্দিনে আল্লাহর কাছে কাতর হয়ে তওবা করে ফরিয়াদ জানানোর পরিবর্তে যদি খেলাধুলার পেছনে মাতাল হয়ে থাকি, তাহলে আল্লাহর আযাব এসে গেলে আমাদেরকে রক্ষা করবে কে? আল্লাহ এমন গাফলতি থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন।-আমিন

লেখক : কলামিস্ট-গবেষক মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ