ঢাকা ০৬:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন ::
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন এর জন্য যোগাযোগ করুনঃ ০১৫৭২-৬৩১৭৪৫
বিজ্ঞপ্তিঃ ::
আমাদের পত্রিকাতে সারাদেশে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠিয়ে দিন ই-মেইলেঃ sylhetertimes24@gmail.com

সিলেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, স্বাস্থ্যখাতে ৫৮ ভাগ চিকিৎসকের পদ ফাঁকা

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:০৫:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • / 8
সিলেটের টাইমস এর সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিলেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ, স্বাস্থ্যখাতে ৫৮ ভাগ চিকিৎসকের পদ ফাঁকা খবর পাওয়া গেছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলা ভিত্তিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ৫৮ শতাংশ চিকিৎসকের পদই ফাঁকা। সবচেয়ে বেশি পদ শূন্য মৌলভীবাজার জেলায়।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের তথ্য বলছে, চার জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ৫২৬টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ২২৫ জন। খালি পদের সংখ্যা ৩০১। সিলেট জেলায় ১৭১ পদের বিপরীতে কর্মরত ১০২ জন, সুনামগঞ্জে ১৩৩ জনের বিপরীতে ৫৭ জন, হবিগঞ্জে ১১৯ জনের বিপরীতে ৪৪ জন এবং মৌলভীবাজারে ১০৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন চিকিৎক।
উপজেলা পর্যায়ে জুনিয়র কনসালটেন্ট এর ২৪১টি মঞ্জুরিকৃত পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১১০ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৮৬ জনের মধ্যে ৪৫ জন, সুনামগঞ্জে ৬১ জনের মধ্যে ১৮ জন, হবিগঞ্জে ৫৪ জনের মধ্যে ২২ জন এবং মৌলভীবাজারে ৪০ জনের মধ্যে ২৫ জন কর্মরত আছেন। সবমিলিয়ে খালি পদের সংখ্যা ১৩১টি। জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ৩৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩টি ২০ শয্যার হাসপাতাল, ৮৫টি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবাদানকারী এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, টেকনেশিয়ানের সংকট রয়েছে। ফলে, কাংখিত সেবা না পেয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুঁটছেন রোগীরা।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় কর্মচারীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তারা প্রত্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে থাকতে চান না। সে হিসেবে অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ১৬টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে কাগজে কলমে ২ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিদ্যমান ১ জন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে কর্মরত। বেতন ভাতা নিচ্ছেন কানাইঘাট হাসপাতাল থেকে। কানাইঘাটের তিন লাখ মানুষকে সেবা দিচ্ছেন একজন মাত্র চিকিৎসক। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সগুলোয় জনবল সংকটের সমস্যা অনেক পুরনো। এ কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষ যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। অনেক স্থানে আবার কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। জুনিয়র চিকিৎসকরা তাই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও রোগীদের জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ফলে, জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবসময়ই সক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি থাকে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে প্রায়ই চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। ধর্মপাশার ভুক্তভোগী রোগী হারিছ মিয়া জানান, বুকের ব্যথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ডাক্তার তাকে ভাল করে না দেখেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অথচ, স্থানীয় চিকিৎসক আন্তরিক হলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে পারতেন বলে জানান।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক কম হলেও যারাই কর্মরত রয়েছেন তারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়ে সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান আরো জানান, বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষা চলছে। বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশকৃতরা পদায়ন হলে চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সিলেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, স্বাস্থ্যখাতে ৫৮ ভাগ চিকিৎসকের পদ ফাঁকা

আপডেট সময় : ১২:০৫:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

সিলেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ, স্বাস্থ্যখাতে ৫৮ ভাগ চিকিৎসকের পদ ফাঁকা খবর পাওয়া গেছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলা ভিত্তিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ৫৮ শতাংশ চিকিৎসকের পদই ফাঁকা। সবচেয়ে বেশি পদ শূন্য মৌলভীবাজার জেলায়।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের তথ্য বলছে, চার জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ৫২৬টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ২২৫ জন। খালি পদের সংখ্যা ৩০১। সিলেট জেলায় ১৭১ পদের বিপরীতে কর্মরত ১০২ জন, সুনামগঞ্জে ১৩৩ জনের বিপরীতে ৫৭ জন, হবিগঞ্জে ১১৯ জনের বিপরীতে ৪৪ জন এবং মৌলভীবাজারে ১০৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২২ জন চিকিৎক।
উপজেলা পর্যায়ে জুনিয়র কনসালটেন্ট এর ২৪১টি মঞ্জুরিকৃত পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১১০ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৮৬ জনের মধ্যে ৪৫ জন, সুনামগঞ্জে ৬১ জনের মধ্যে ১৮ জন, হবিগঞ্জে ৫৪ জনের মধ্যে ২২ জন এবং মৌলভীবাজারে ৪০ জনের মধ্যে ২৫ জন কর্মরত আছেন। সবমিলিয়ে খালি পদের সংখ্যা ১৩১টি। জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ৩৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩টি ২০ শয্যার হাসপাতাল, ৮৫টি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবাদানকারী এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, টেকনেশিয়ানের সংকট রয়েছে। ফলে, কাংখিত সেবা না পেয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুঁটছেন রোগীরা।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় কর্মচারীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তারা প্রত্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে থাকতে চান না। সে হিসেবে অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ১৬টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে কাগজে কলমে ২ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিদ্যমান ১ জন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে কর্মরত। বেতন ভাতা নিচ্ছেন কানাইঘাট হাসপাতাল থেকে। কানাইঘাটের তিন লাখ মানুষকে সেবা দিচ্ছেন একজন মাত্র চিকিৎসক। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সগুলোয় জনবল সংকটের সমস্যা অনেক পুরনো। এ কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষ যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। অনেক স্থানে আবার কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। জুনিয়র চিকিৎসকরা তাই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও রোগীদের জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ফলে, জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবসময়ই সক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি থাকে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে প্রায়ই চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। ধর্মপাশার ভুক্তভোগী রোগী হারিছ মিয়া জানান, বুকের ব্যথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ডাক্তার তাকে ভাল করে না দেখেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অথচ, স্থানীয় চিকিৎসক আন্তরিক হলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে পারতেন বলে জানান।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক কম হলেও যারাই কর্মরত রয়েছেন তারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়ে সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান আরো জানান, বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষা চলছে। বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশকৃতরা পদায়ন হলে চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।